মেলার আকর্ষণ ‘লেখক বলছি’

একুশে বইমেলায় নতুন আকর্ষণ হয়ে এসেছে ‘লেখক বলছি’ আয়োজনটি। নবীন প্রবীণ সব লেখকের কাছেই এ আয়োজনটি আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে এজন্য একটি দৃষ্টিনন্দন মঞ্চও সাজানো হয়েছে।
মঞ্চে নির্ধারিত কবি অথবা লেখক বসবেন। তার নতুন বই নিয়ে প্রশ্ন করবেন উপস্থাপক। একজন কবি বা লেখক নিজের লেখা সম্পর্কে, বই সম্পর্কে কথা বলবার জন্য সময় পবেন বিশ মিনিট।
প্রথম দিনেই শুরু হয়ে গেছে এ আয়োজনটি। দিন দিন বাড়ছে এর প্রতি লেখক পাঠকদের আগ্রহ। মেলায় ‘লেখক কুঞ্জ’ বেশ আগে থেকেই ছিল। কিন্তু সেটা লেখকদের আড্ডার জায়গা হিসেবে বিবেচিত হত। পরে এই লেখক কুঞ্জ লেখকদের কাছে গৌণ হয়ে পড়ে। কেননা, লেখক কুঞ্জ বানিয়ে দেয়া ছাড়া মেলা কর্তৃপক্ষের আর বিশেষ নজর ছিল না এর প্রতি।
‘লেখক বলছি’ চালু করবার পরে লেখক ও বই বাছাই করে দিচ্ছে মেলা কর্তৃপক্ষ। যেদিন লেখক কথা বলবেন তার আগের দিন তার বই জমা দিতে হবে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের কাছে। সেখান থেকে প্রতিদিন পাঁচজনকে নির্বাচন করে দেয়া হয়। তারাই পরে আলোচনায় অংশ নেন।
গতকাল সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লেক পাড়ে ‘লেখক বলছি’ কর্ণারের এ আয়োজনে সোমবার নিজেদের সাহিত্যকর্ম বিষয়ে আলাপনে অংশ নেন গিরিশ গৈরিক (বই: বৈঠকখানায় কবি), জাকির তালুকদার (বই: গল্পের জার্নাল), তিথি আফরোজ (বই: তিথির তিরিশ), নাসিমা আনিস (বই: বৃহন্নলা বৃত্তান্ত) এবং বিধান রিবেরু (বই: চলচ্চিত্র বোধিনী)। প্রত্যেকেই তাদের বইয়ের ওপর ২০ মিনিট কথা বলেন। এরপর চলে পাঠক প্রশ্নত্তোর পর্ব।


নিজের বই সম্পর্কে কবি তিথি আফরোজ জানান, আমি আমার লেখার মধ্য দিয়ে মূলত মানুষের সংকট, সংকীর্ণতা, বহুরূপী প্রবণতা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি।
এ প্রসঙ্গে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, এ আয়োজনটি আমরা বেশ আশাবাদী। ধীরে ধীরে এটি জনপ্রিয়তা পাবে বলে বিশ্বাস। তাছাড়া, মেলায় এসে পাঠকরা বই কেনার বিষয়ে একটা ধারা পাবেন।
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য মতে গতকাল মেলার চতুর্থ দিনে বই প্রকাশিত হয়েছে ১৪১টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো: গ্রন্থকুটির এনেছে মোহীত উল আলমের উপন্যাস ‘মুরলী’, জ্যোতি প্রকাশ এনেছে ড. তপন বাগচীর সমালোচনা গ্রন্থ ‘মহসিন হোসাইনের কবিতার বিষয় ও শরীরী নির্মণ’ হাওলাদার প্রকাশনী এনেছে নীরা কাদরীর আবৃত্তির বই ‘আবৃত্তির নির্বাচিত কবিতা’, পালক পাবলিশার্স এনেছে কাজী খলীকুজ্জামান আহমদের প্রবন্ধ ‘অবস্থা বদলের জন্য ব্যবস্থা বদলের সন্ধানে’, নাগরী এনেছে আবু হাসান শাহরিয়ারের কাব্যগ্রন্থ ‘বিমূর্ত প্রণয়কলা, অন্যপ্রকাশ এনেছে শিহাব শাহরিয়ারের কাব্যগ্রন্থ ‘পড়ে থাকে অহংকার, ইমদাদুল হক মিলনের গল্পের বই ‘ফেলে যাওয়া রুমালখানি, নাসরীন জাহানের উপন্যাস ‘সিসেমের দ্বিতীয় দরজা, পাঞ্জেরী এনেছে সাইফুল্লাহ মাহমদু দুলালের কবিতার বই ‘প্রেমের আগেই পড়েছি বিরহে’, নবযুগ প্রকাশনী এনেছে সনজীদা খাতুনের প্রবন্ধ ‘নজরুল মানস’, অনন্যা এনেছে কনক চাঁপার গল্পের বই ‘কাঁটাঘুড়ি-২. সৈয়দ শামসুল হকের কবিতার বই ‘নায়লন গোলাপ টেবিলে’ মোস্তফা মামুনের কিশোর উপন্যাস ‘রাজু ভাই-মাইনাস শেলী আপা’ ইত্যাদি।
এদিকে গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের ওপর তিন গবেষকের গবেষণা প্রবন্ধ ‘মহানায়কের মহাকাব্য’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। বইটি পাওয়া যাবে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের স্টল নং-৪৯৬তে।
‘হাজার বছরের প্রতীক্ষিত স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন’ - তোফায়েল আহমদ
অমর একুশে গ্রন্থমেলার চতুর্থ দিন গতকাল বিকেলে মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সুভাষ সিংহ রায়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. নূহ-উল-আলম লেনিন। স্বাগত বক্তৃতা করেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন মাকিদ হায়দার এবং ইকবাল আজিজ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাহমুদা আখতার। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা, খায়রুল আনাম শাকিল, ইয়াকুব আলী খান, লীনা তাপসী খান এবং ক্যামেলিয়া সিদ্দিকা।


মেলার আকর্ষণ ‘লেখক বলছি’ মেলার আকর্ষণ ‘লেখক বলছি’ Reviewed by Prothomkantho on 10:34 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.